স্মরণ শক্তি নিয়ে অজানা সব তথ্য

কেউ কেউ বলে থাকেন বয়স হয়েছে তো আজকাল আগেকার মত মনে রাখতে পারি না। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন কি ছোট কালে কয়টি বিষয়ে চিন্তা করতেন, আর আজকাল কোন কোন বিষয়ে? ছোট কালের বিষয় যেমন- এখন শীতকাল, কাল সকালে খেজুরের রস খেতে হবে, দাদুকে বলতে হবে আমার জন্যে একটি র‌্যাকেট কিনতে আর বন্ধুর কাছে আমার গল্পের বইটি রয়েছে। এসব বিষয় পাল্টে গেছে বর্তমানের ৭০ বছর বয়সে। এখনকার আইটেম ৩টির স্থলে ৩০টি, যেমন বড় ছেলেটি অ্যামেরিকায় পড়াশুনা করছে তাকে একটি E-mail করতে হবে, ব্যাংক থেকে পেনশনের টাকা তোলা প্রয়োজন, আমার জন্যে তিনটি ওষুধ আর স্ত্রীর জন্যে দুইটি, ছোট মেয়ের শ্বশুরকে দাওয়াত দিতে হবে এবং সবশেষে নাতির জন্য খেজুরের রস, একটি র‌্যাকেট এবং একটি গল্পের বই। মোট তিনটি আইটেম? এবং এ সবের মধ্যে শেষের তিনটির Priority কোথায় গিয়ে পড়ে হিসেব করুন তো। যদি ভুলতেই হয় তবে কি আপনি আপনার প্রেসারের অসুধ কেনার কথা ভুলবেন নাকি নাতির জন্যে গল্পের বই কেনার কথা, যে শীতকালে তার বাৎসরিক পরীক্ষা শেষ করে অতিথি হয়ে আপনার গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে এসেছে। বাস্তব কারণে এভাবই বৃদ্ধ বয়সে মানুষ Complain করে যে, সে অনেক কিছু ভলে যায়। প্রকৃতপক্ষে ৭০ বছর বা তারও বেশি বয়সী একজন মানুষও হতে পারেন চমৎকার স্মৃতিশক্তিধর মানুষ। সেজন্য প্রয়োজন একটা ইচ্ছাশক্তি কার্যকর করা। মনে রাখবেন কারো স্মরণশক্তি তখনই ক্ষয় হতে থাকে যদি তাকে ব্যবহার করা না হয়। অপরদিকে যদি এর ব্যবহার করা হয়, তাবে আমৃত্যু মানুষের স্মরণশক্তি শুধু বেড়েই চলে।


আপনি যে কারণে ভুলে যান তার প্রথমটি হলো আপনি ধরেই নিচ্ছেন যে আপনার বয়েস হয়েছে তাই ভুলে যাবেন। অর্থাৎ ভুলে যাবেন এটিই আপনার সিদ্ধান্ত। কিন্তু মনে রাখার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে, মনে রাখার সিদ্ধান্ত। অর্থাৎ প্রয়োজনের বিপক্ষ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আপনি- তাই ভুলে যাচ্ছেন।

ভুলে যাওয়া’ ব্যাধি একটি অতি সাধারণ অসুখ, তবে এর চিকিৎসা করা না হলে বেড়েই চলে। এই চিকিৎসা কিন্তু আবার প্রচলিত নিয়মের ওষুধ দিয়ে সারানোর পদ্ধতি নয়- বরং ব্যক্তির মনে কিছুটা বিশ্বাস স্থাপন করা যে প্রকৃতপক্ষে এটা কোন অসুখ-ই নয়। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বিস্ময় আইনস্টাইন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জার্মানী থেকে পালিয়ে আমেরিকায় চলে যান। সরকারি উদ্যেগে তাঁকে একটি বাসস্থান বরাদ্দ দেওয়া হয় সেখানে। একবার জরুরি কাজে এক ভদ্রলোক তাকে টেলিফোন করে তার বাসার নম্বর জানতে চেয়েছিলেন তাঁর সাথে দেখা করবেন বলে। আইনস্টাইন তাকে বাসার নম্বর বলতে পারেননি। কারণ তিনি সেটা ভুলে গিয়েছিলেন। অবশ্য ভুলে যাবেনই বা না কেন। আইনস্টাইন অপ্রয়োজনীয় (তার মতে) তথ্য দিয়ে তার স্মৃতির ভান্ডার ভরে রাখতে চাইতেন না। তার বাসার ঠিকানা এই অপ্রয়োজনীয় তথ্যের পর্যায়েই পড়ে। এ ব্যাপারে তার অভিমত সম্পর্কে একটি ঘটনা বলি। তাঁকে একবার প্রশ্ন করা হয় এক মাইল কত ফুট থাকে। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “বলতে পারব না। যেসব তথ্য যে কোন রেফারেন্স বইয়ে দু’মিনিটে খুঁজে পাওয়া যায় সে গুলি মাথায় রাখার দরকার কি? আইনস্টাইন মনে করতেন মস্তিস্ককে তথ্য ভান্ডার না করে চিন্তা ভাবনায় প্রয়োগ করা বাঞ্চনীয়।

যাক ফিরে আসি আগের কথায়। ধরি স্মৃতি শক্তির বৃদ্ধি সম্পর্কিত এসব তথ্য আপনার জানা ছিল না আগে। এখন জেনেছেন এবং আপনার নিজের ব্যাপারে তা প্রয়োগ করতে চান। প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে করবেন?

এক্ষেত্রে একজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম বলছি- তিনি হলেন টনি বুজন। তিনিই ওয়ার্ল্ড মেমরি চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতার চালু করেন ১৯৯১ সাল থেকে। সুদীর্ঘ সময় এই ধরণের কর্মকান্ডের মাধ্যেমে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে তার অভিমত হচ্ছে-

(ক) স্মরণ শক্তি তখনই ক্ষয় হতে থাকে যদি তার ব্যবহার না করা হয়।

(খ) ব্যবহার বাড়িয়ে ক্ষয়ে যাওয়া স্মরণ শক্তির বৃদ্ধি করা যায়। সে জন্যে প্রয়োজন হয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আর ইচ্ছাশক্তিকে কর্যকর করার।

সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত হয়ে এবং পরবর্তিতে প্রাকটিস চালিয়ে যেয়ে কেউ কেউ অবাক করার মত স্মরণ রাখার ক্ষমতা অর্জন করে থাকেন। তাদেরকে মেন্টাল সুপার এথলেট বলে আখ্যায়িত করা হয়। আমাদের সবারই এদের মতো মেন্টাল সুপার এথলেট হওয়ার দরকার নেই। তবে একটা নির্ভরযোগ্য স্মৃতিশক্তি সবার জীবনেই গুরুত্বপূর্ণ।

একটা কৌশলের বর্ণনা দিচ্ছি যা হলো নাম মনে রাখার কৌশল। কৌশলটি হচ্ছে-

১। কারো নাম মনে রাখবেন কিনা সে ব্যাপারে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন।

২। নামটা সঠিকভাবে জেনে, শুনে এবং বুঝে নিন।

৩। লোকটির চেহারা পর্যবেক্ষণ করে চেহারার বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদাভাবে মনে রাখুন। এভাবে একটি মানচিত্র তৈরি করুন আপনার মানসপটে।

৪। নামটা মনে রাখার জন্য অন্য কিছুর সাথে সাদৃশ্য খুঁজে নিন। প্রয়োজনবোধে আরও দু’একটি পরিচিত নামের সাথে এই নামটিকে মিলিয়ে নিন, যেমন: মান্নান-হান্নান। মা’ ই বেশি কাছের তাই মান্নান, হান্নান হয়।

এভাবে কিছুদিন প্রাকটিস চালিয়ে দেখুন কাজ হয় কিনা।

Post a Comment

0 Comments