সময়কে কিভাবে কাজে লাগাতে হয় সে সম্পর্কে দু’একটা কথা বলছি।

১. প্রত্যহ সকালে লিখিতভাবে আপনার দিনের কাজগুলির পরিকল্পনা করুন এবং হয়ে গেলে একটি একটি করে তা কেটে দিন। অনেকে মনে করেন কাজের তালিকা করার দরকার কি- মুখস্থ রাখলেই তো হলো। এভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা তালিকার কিছু অংশ ভুলে যাওয়ার রিস্ক নিয়ে থাকেন। সর্বপরি এভাবে মুখস্থ রাখাটাও তো একটি কাজ। যদি লিস্ট বড় হয় তবে দরকার কি এভাবে অপ্রয়োজনীয় একটি বাড়তি কঠিন কাজ তৈরি করে বোঝা বাড়ানো।

২. টেলিফোনে বা অন্য কোন ভাবে না জানিয়ে কারো সাথে দেখা করতে যাবেন না। এখানে সমস্যা হলো ঈপ্সিত ব্যক্তি না জানার কারণে available নাও হতে পারেন। আর সে ক্ষেত্রে যাওয়া ও ফিরে আসার সম্পূর্ণ সময়টাই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৩. কাগজ- কলম বা ছোট্ট নোট বই সব সময় পকেটে রাখবেন যাতে অবসর সময়ে আপনার চিন্তা-পরিকল্পনা লিখে নিতে পারেন।

৪. বিশ্রামের সময়কে নামাজের সময়ের সাথে মিলিয়ে পরিকল্পনা করুন। নামাজের পূর্বে ওজু করার ফলে শরীরের অনেক অংশই শীতল হয়ে থাকে যা আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের উপর সুপ্রভাত ফেলে। আর নামাজের সময় কায়মনোবাক্যে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর কাছে নিজেকে হাজির করার যে মানসিক শান্তি- এটাকে তো পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি শান্তির কাজ বলে মনে করা হয় সঙ্গত কারণে।

৫. লেখাপড়া করে, কোন কিছু মুখস্থ করে বা গঠনমূলক কিছু করে অবসর সময়ের সদ্ব্যবহার করুন।

৬. সাক্ষাৎসূচি করাকালে উভয়েই যেন সঠিক সময় ভালভাবে বুঝে নেন সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। ধরুন আপনি আপনার বন্ধুর সাথে প্রোগ্রাম করেছেন কাল বিকালে চারটায় একত্রিত হবেন একটা নির্দিষ্ট স্থানে। আপনি হয়তো সময়মত যাবেন, কিন্তু সে বাঙ্গালীর সময় চারটা মানে সাড়ে চারটা ভেবে আধাঘন্টা পরে এসে হাজির হবে। এর ফলে আপনার মূল্যবান আধাঘন্টা সময় নষ্ট হবে। চারটা মানে চারটা, সাড়ে চারটা নয়। আর যদি তুমি বাঙ্গালীর সময় বোঝ তাহলে সাড়ে তিনটায় এসো।”

৭. দূরে যাওয়ার সময়ে সম্ভাব্য সময়ের চেয়ে বেশি সময় হাতে রাখবেন যাতে অভাবিত কিছু ঘটলেও যেন সময়মত সেখানে যেয়ে পৌছতে পারেন। আর বাড়তি সময়ে সম্পন্ন করার জন্য হাতে কিছু কাজও নিয়ে নিবেন।

৮. প্রবন্ধ লেখা, বা বক্তৃতা প্রস্তুত করা বা এ ধরনের যে কোন কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় সকল উপাদান হাতের কাছে নিয়ে কাজ শুরু করবেন।

৯. আপনার সময়ক্ষেপণ করতে পারে এমন চিন্তাশূন্য লোক এড়িয়ে চলবেন। তবে এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবেন যেন লোকটি আবার আপনার আচরণে কষ্ট না পায়।

১০. চিঠি বা টেলিফোনে সেরে নেয়া যায় এমন কোন কাজের জন্য নিজে ব্যক্তিগতভাবে যাবেন না। এভাবে আপনার যাওয়া আসার সময়কে বাঁচাতে পারবেন।

১১. যদি কোন সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ বা কোন কাজ থাকে, তাহলে সবকিছু লিখে পরিকল্পনা করুন যাতে স্বল্প দূরত্ব অতিক্রম করে এবং ভ্রমন দীর্ঘায়িত না করে সব কাজ করে আসতে পারেন।

সময় সম্পর্কে কিছু কথা


(ক) সময় নেবেন-

সময় নেবেন চিন্তা করতে, এটি ক্ষমতার উৎস;

সময় নেবেন খেলতে, এটি অনন্ত যৌবনের আঁধার;

সময় নেবেন পড়তে, এটি জ্ঞানের ভিত্তি;

সময় নেবেন নামাজ আদায় করতে, এটি দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় শান্তি;

সময় নেবেন ভালবাসতে এবং ভালবাসা প্রদান করতে;

সময় নেবেন বন্ধু বনে যেতে, এটি সুখের সোপান;

সময় নেবেন হাসতে, এটি সর্বোত্তম লুব্রীক্যান্ট;

সময় নেবেন দিতে বা দন করতে, স্বার্থপর হয়ে জীবনটাকে ছোট করার কোন অর্থ নেই।

সময় নেবেন কাজ করতে, এটি সফলতার মূল্য (price) ,

কিন্তু সময়ক্ষেপণের জন্য কখনও সময় নেবেন না।

স্মরণ রাখবেন রাসূলে করীম স. বলেছেন-

“যারা দুটি দিন একই রকম যায় নিঃসন্দেহে সে ক্ষতিগ্রস্থ।”

(খ) সুব্যবহৃত সময়

জীবনের একটা ভাল অংশ বন্ধুদের সাথে ব্যয় হয়। এ সময়ে আমরা কী ধরনের আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত হই? নিম্নোক্ত মহাবাণীগুলি স্মরণ রাখবেন সে ক্ষেত্রে-

মহৎ মন- ধারণা বা চিন্তামূলক আলোচনা করে;

সাধারণ মন- ঘটনাবলী আলোচনা করে;

ছোট মন- পরচর্চা করে;

অতি ছোট মন- নিজেদেরকে নিয়ে আলোচনা করে।

আজকের কাজ আগামীকালের জন্য ফেলে রাখবেন না

যদি আপনি কাজ শুরু করতে বিলম্ব করেন, তবে কাজ স্তুপীকৃত হতে থাকবে। কাল কি হবে তা আপনি জানেন না। গতকালের অসমাপ্ত কোন কাজ নেই, এমন অবস্থায় যদি আপনি দিন শুরু করতে পারেন, তবে তা হবে এক বড় স্বস্তি। পাঁচ মিনিট বা কম সময়ের কাজ হলে তৎক্ষণাৎ করে ফেলা ভাল। পাঁচ মিনিটের বেশি লাগলে অগ্রাধিকার অনুযায়ী কর্যতালিকা তৈরি করে নেবেন।

আজকের কাজ আগামীকালের জন্য ফেলে রাখবেন না। এভাবে ফেলে রেখে কিন্তু আপনি কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে রিস্ক নিচ্ছেন। আজকের কাজ আজই সম্পন্ন করতে পারলেন না তাহলে আগামীকাল কিভাবে ফেলে রাখা কাজসহ দিনের নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করবেন? 

আর কয়েকটি বিষয় বলছি এবার।

১. আপনার সময় কিভাবে নষ্ঠ হচ্ছে প্রতিদিন তার একটা তালিকা তৈরি করুন।

২. সাধারণভাবে অব্যবহার্য এই সময়গুলোকে কাজে লাগনোর জন্যে একটা সুন্দর পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।

৩. আপনার ধারে কাছে সব সময়েই কিছু না কিছু পাঠ্য সামগ্রী রাখুন যাতে করে সুযোগ পেলেই সেগুলোকে বের করতে পারেন এ ধরনের সময়কে কাজে লাগানোর জন্য।

ভেবে দেখেছেন কি এই ব্যবস্থাপনা আপনাকে কি পরিমাণ সাহায্য করতে পারে। সে সময়গুলো মূল্যবান হয়ে উঠবে যখন আপনি কারো জন্যে অপেক্ষা করছেন কোন এক স্থানে, অথবা কোন মিটিং এ যোগদানের জন্যে আপনি সময় মত পৌছে গিয়েছেন অথচ মিটিং শুরু হচ্ছে না অন্যরা আসেনি বলে। সে সময় আপনার ব্যাগ থেকে বই বের করে পড়তে শুরু করে দিয়েছেন। আপনি কখনও কি ভেবে দেখেছেন আপনার এই কাজ আপনার অধ:স্থন নেতা কর্মীদের উপর কিভাবে প্রভাব ফেলবে।

কল্পনা করুন তো দেখি এমন একটা সময়ের যখন আপনি একটা ট্রেনে বা লঞ্চে অন্য কোন যাত্রীর সাথে দূরের কোন গন্তব্য স্থানে যাচ্ছেন। আপনারা কয়েকজন মিলে গল্প করেছেন, কেউ ঝিমাচ্ছেন, আর একজন ব্যক্তি বই পড়ছেন। তাহলে কার প্রতি আপনার শ্রদ্ধাবোধ বেশি হবে? এই শ্রদ্ধাবোধের খুবই প্রয়োজন বর্তমানে এ সমাজের জন্য। আর একটি ঘটনা বলছি। যখন আপনি আপনার অফিসে যাওয়ার পথে অফিসের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন কোথাও, আপনি দাঁড়িয়ে আছেন অথচ আপনার হাতে একটি পাঠ্য সামগ্রী। খুবই ভাল হয় এটি যদি ছোট আকারের কোন কোরআন শরীফ হয়। আপনি হয়তো ভাবছেন একা একা দাঁড়িয়ে আছেন যেখানে; অথচ প্রকৃতপক্ষে আপনার পাশে কয়েক জন ফেরেশতাও রয়েছেন যাদের রিপোর্ট অনুযায়ী আপনি ইতোমধ্যে বেশ কিছু সওয়াবের ভাগী হয়ে যেতে পেরেছেন। আমাদের জীবনটাতো এমনই। এভাবে প্রচুর সুযোগ রয়েছে সওয়াব অর্জনের; পক্ষান্তরে এখানে সম্ভাবনাও রয়েছে বিপুলভাবে এই সুযোগসমূহের সদ্ব্যবহার না করার কারণে গুনাহ এর ভাগীদার হওয়ার। মহান রাব্বুল আলামীন এই সমস্ত সুযোগের এবং তার ব্যবহারের ব্যাপারে আমাদের হিসাব নিবেন হাশরের দিন