ব্যর্থতা হচ্ছে সাফল্যের ভিত্তি

কাজ শুরু করে দু’একবার ‍উদ্যোগ নিয়েছো এবং ব্যর্থ হয়েছো। এর পরে কি করবে? এই প্রসঙ্গে একজনের জীবন কাহিনীর উল্লেখ করি। তিনি ২১ বছর বয়সে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ হন, ২৬ বছর বয়সে তার প্রিয়তমা মারা গেলেন। কংগ্রেসের নির্বাচনের পরাস্ত হলেন ৩৪ বছর বয়সে। ৪৫ বছর বয়সে হারলেন সাধারণ নির্বাচনে। ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সে ক্ষেত্রেও ব্যর্থ হলেন ৪৭ বছর বয়সে। সিনেটের নির্বাচনে পূনর্বার হারলেন ৪৯ বছর বয়সে। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হলেন ৫২ বছর বয়সে। এই ব্যক্তির নাম আব্রাহাম লিঙ্কন। এর নাম কি ব্যর্থতা? আব্রাহাম লিঙ্কন কিন্তু তা মনে করেননি। তার মতে পরাজয় মানে সমাপ্তি নয়, যাত্রা একটু দীর্ঘ হওয়া মাত্র।


১৯০৩ সালে ১০ ই ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের জ্ঞানবুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিলো, কারণ তারা বাতাসের থেকে ভারী একটি যন্ত্র তৈরি করে আকাশে ওড়ার চেষ্টা করছিলেন। এক সপ্তাহ পরে কিটি হক থেকে রাইট ভ্রাতৃদ্বয় তাদের অবিস্মরণীয় আকাশ যাত্রা শুরু করেন। রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বড় যে কারণটি ছিল তা হলো তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং প্রবল আত্মবিশ্বাস।

সব মিলিয়ে একটা কথা বলা দরকার, তা হলো, “সফল মানুষেরা খুব বিরাট কিছু কাজ করেন না। তারা সামন্য কাজকেই তাদের নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে বৃহৎ করে তোলেন। ”

জীবনের পথে চলতে বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হওয়া অবশ্যম্ভাবী। এরূপ বাধা আমাদের এগেয়ে চলার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। দুঃখের মধ্য দিয়েই বাধা-বিপত্তিকে জয় করার সাহস এবং আত্মবিশ্বাস পাওয়া যাবে। আমাদের বিজয়ী হওয়ার শিক্ষাই নেওয়া উচিত- বিজিত হওয়ার নয়। ভয় এবং সন্দেহ মনকে হতাশার অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয় বলে এগুলোকে ঝেড়ে ফেলতে হবে মন থেকে। আর প্রত্যেক বিপত্তির পর নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি কী শিখলাম? এধরনের আত্মবিশ্লেষনের ফলে বাধার অবরোধকে উন্নতির সোপানে পরিণত করা যাবে।

কোনও কাজ নিস্পত্তি করার দৃঢ় অঙ্গীকার নির্মাণ করতে হয় ‍দুটি স্তম্ভের উপর। সে দুটি হল সততা এবং বিজ্ঞতা। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, “যদি তোমার আর্থিক ক্ষতিও হয় তবু তোমার অঙ্গীকারে দৃঢ় থাকার নামই সততা এবং বিজ্ঞতা হচ্ছে, যেখানে ক্ষতি হবে সেই রকম বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ না হওয়া।” 

মনে রাখতে সাফল্যের জন্য জরুরি শিক্ষাক্রম হলো-

জেতার জন্য খেলবে, হারার জন্য নয়।

উন্নত নৈতিক চরিত্রের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করবে, চরিত্রহীনদের সাথে নয়।

সততার বিষয়ে কোনভাবে আপোস করবে না কখনো।

যা অপরের নিকট থেকে পাবে তার থেকে বেশি দিবে তাকে। এব্যাপারে ঋণী থেকে নিজেকে ছোট বানাবে না কখনো।

অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।

উদ্দেশ্যেহীনভাবে কোন জিনিসের সন্ধান করবে না। উদ্দেশ্য ঠিক করে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েই ঈপ্সিত লক্ষ্যের সন্ধানে নামবে।

দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করবে, স্বল্প মেয়াদী নয়। তবে দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা নিতেও পারে প্রয়োজনবোধে।

নিজের শক্তি যাচাই করে তার উপর আস্থা রাখবে।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বড় লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে।

আর সাফল্যের পথে বাধার কারণগুলো হচ্ছে-

বিফলতার আশঙ্কা,

আত্ম-মর্যাদার অভাব,

পরিবল্পনার অভাব,

লক্ষ্য নির্দিষ্ট না করে কাজ শুরু করতে যেয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলা,

একাই অনেক কাজের ভার নেওয়া অর্থাৎ সামর্থ্যের অতিরিক্ত দায় গ্রহণ,

প্রশিক্ষণের অভাব,

অধ্যবসায়ের অভাব এবং

অগ্রাধিকারের অভাব।

মিলিয়ে দেখো তোমার নিজের ক্ষেত্রে এ কতটা তোমাকে আষ্টে পিষ্টে ধরেছে। তারপর সেসব বিপত্তি ঝেড়ে ফেল। দৃঢ়তার সাথে পদক্ষেপ ফেলো সামনে এগোনোর সাফল্যই হবে তোমার প্রাপ্তি, ব্যর্থতা নয়।

Post a Comment

0 Comments