পেশা নির্বাচন মূলত ব্যক্তির সহজাত প্রবৃত্তি (inherent quality) এবং আগ্রহের উপরে নির্ভর করেই করতে হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে অনেক উঁচু একটা লক্ষ্য নির্ধারণ। অধিকাংশ মানুষ এই পর্যায়েই ভুল করে ফেলেন। অনেকেই এই উঁচু লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সাহস পান না। আত্মবিশ্বাস আর নিরবিচ্ছিন্ন সাধনার অভাবেই তারা পিছিয়ে পড়েন। পৃথিবীর ইতিহাসে স্বার্থক লোকদের জীবনী পর্যালোচনা করলে কিন্তু ভিন্নতর চিত্র পাওয়া যায়, তাতে প্রতীয়মান হয় যে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের ক্ষেত্রে অনেক বাধাই অতিক্রম করা সম্ভব।

আমরা মানুষের সংগ্রামী জীবনে দেখি, সাধনার মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসে সবাইকে চমকে দিয়ে কিভাবে অন্ধমানুষ মিল্টন বিশ্ববিখ্যাত কবি হলেন। একজন বধির মানুষ বিটোফেন কিভাবে সঙ্গীত রচয়িতা হলেন। একজন অন্ধ, বোবা আর বধির মেয়ে হেলেন কিলার কিভাবে সাধনা করে চব্বিশ বছর বয়সে তার কলেজে সর্বোচ্চ মার্ক নিয়ে বিএ পাস করলেন এবং পরবর্তিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করলেন। কিভাবে একজন কাঠুরিয়ার ছেলে আর মুদি দোকানদার বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন হলেন। আর যদি অজুহাতের প্রশ্ন তুলি তবে কতই পাওয়া যাবে জীবন থেকে পিছিয়ে পড়ার। কিন্তু স্বার্থক লোকেরা কি তা করেন? তাহলে তো রুসবেল্ট তার অচল পা দুটির অজুহাত দিতে পারতেন; ট্রুম্যান কলেজ শিক্ষার অভাবকে ব্যর্থতার কারণ বলে অভিহিত করতে পারতেন; কেনেডি বলতে পারতেন, “এত অল্প বয়সে কি করে প্রেসিডেন্ট হবো” জনসন ও আইস্যানহাওয়ার তাদের হৃদরোগের অজুহাত দেখাতে পারতেন।

জীবন সংগ্রামে এমন বাধা হাজারটা তো আসবেই। কারা এই বাধা অতিক্রম করতে পারেন? নিশ্চয়ই তারা সাধারণ শ্রেণীর মানুষ অর্থাৎ মি: এভারেজম্যানদের” দলে পড়বেন না। এ প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার হিশাম আল তালিবের একটি উদাহরণ প্রণিধানযোগ্য। তাঁর “ট্রেনিং গাইড ফর ইসলামিক ওয়ারকারস” বইতে মি. এভারেজম্যান নামক এক ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়েছেন যার বর্ণনা হলো-

মি. এভারেজম্যান ১৯০১ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সি বা ডি গ্রেডের মান পেয়ে পরীক্ষা পাস করেছেন, ১৯২৪ সালে মিস মিডিওকার (মাঝারি ধরনের মেয়ে) কে বিয়ে করেছেন, “এভারেজম্যান জুনিয়র” (Mr. Averagemant jr) এবং বেটী মেডিওকার নামে এক ছেলে ও এক মেয়ে লাভ করেছেন। চল্লিশ বছরের নামদামহীন চাকুরি জীবনে বিভিন্ন অগুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন। তিনি কোন সময় কোন ঝুকি বা সুযোগ নেননি, তিনি প্রতিভার স্ফূরণ এড়িয়ে চলেছেন, কোন সময় কারো সাথে কোন কিছুতে জড়িত হননি। তার প্রিয় পুস্তক ছিল – ‘non-Involvement the story of playing It safe’ অর্থাৎ ‘সম্পৃক্তহীন নিরাপদ জীবন চালনার গল্প। তিনি কোন উদ্দেশ্য-লক্ষ্য, পরিকল্পনা, আকাঙ্ক্ষা, সংকল্প বা আস্থা ব্যতীত ৬০ বছরের জীবন সমাপ্ত করেছেন, তার কবর গাহে খুদিত হয়েছে-

এখানে শায়িত আছেন

মি. এভারেজম্যান

জন্ম ১৯০১; মৃত্যু ১৯৬১, কবরস্থকরণ ১৯৬৪

তিনি কখনো কিছু করতে চেষ্টা করেন নাই

তিনি জীবন থেকে অল্পই প্রত্যাশা করেছেন

জীবন তাকে তার প্রাপ্য দিয়েছে।

মি. এভারেজম্যান হয়ে কিন্তু বড় কিছু করা সম্ভব হয় না, যদিও সমাজের বেশিরভাগ লোক তারাই। এ প্রসঙ্গে একজন বিজ্ঞ সমাজবিজ্ঞানী বলেছিলেন যে, সকল সমাজেই গড়ে ৮৫% লোক এই শ্রেণীভুক্ত। এরা ভেড়ার পালের মত- কোথায় যাচ্ছে বা কেন যাচ্ছে তা তারা জানে না, জানার প্রয়োজনও মনে করে না।

কোন জাতির উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন করার জন্যে প্রয়োজন হচ্ছে বাকী ১৫% লোককে নিয়ন্ত্রণে আনার। এই ৮৫% লোক ভাগ্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে, এবং এরাই হচ্ছে মি. এভারেজম্যান। তুমি বড় হতে চাও- এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তুমি অবশ্যই মি এভারেজম্যান হবে না। কি আছে তার যা তোমাকে আকর্ষণ করবে? হতাশা, উচ্চাকাঙ্ক্ষার অভাব, লক্ষ্য-উদ্দেশ্যহীনতা, পরিকল্পনা, সংকল্প ও আস্থা বিহীনতা ছাড়া? এসব নিয়ে কখণও বড় কিছু করা যায় কি? বণ্যার তোড়ে প্রবাহমান স্রোতস্বিনীতে ক্ষুদ্র খড়-কুটা ভেসে যেতে দেখেছো কখনও- এরা তাই। পার্থক্য শুধু একটা- বন্যার স্রোতে নয় বরং সময়ের স্রোতে ভেসে হারিয়ে যায় এরা।