সময়ের মূল্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা

সময়ের মূল্য

ব্যর্থ লোকেরা যা করতে অনিচ্ছুক তা করে সফল লোকেরা তাদের সময়ের সদ্ব্যবহার করে। সফলতার জন্যে প্রয়োজনীয় ত্যাগ-তিতিক্ষার সাথে খাপ খাইয়ে সময় ব্যয় করার চেয়ে ব্যর্থতার গ্লানির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়াকে সাধারণ ব্যক্তিরা সহজতর মনে করে। এখানেই হচ্ছে অর্জনে যে ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রয়োজন তার গুরুভার গ্রহণ করতে সমর্থ হয় না বলেই সাধারণ লোকেরা এই অবস্থার সাথে তাল মেলাতে পারে না। এটি তাদের কাজ নয়, অসাধারণ কাজ। তাঁরা বরং ঝরে পড়া সম্প্রদায়ের সাথে মিলে যেতে সমর্থ হয়, যার শেষ পরিণাম হলো জেনে-শুনেই ব্যর্থতার গ্লানি ধারণ করা।

মানব জীবনের বরাদ্দকৃত সময়টুকু সাধারণভাবে কাটিয়ে দেওয়ার এটাই হচ্ছে সম্ভবত সর্বজন পরিচিত প্রথা। আমাকে আজ একটি কাজ দিলে কাল করব বলে রেখে দেব, আর এই কাজটিই যদি আগামীকল্য দেওয়া হয় তবে তা পরবর্তি দিনের জন্য রক্ষিত হবে। এভাবেই আমরা সময়ক্ষেপণ করে থাকি, আর সেই সাথে সুযোগকে হাতছাড়া করি। আর এভাবেই শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের বিড়ম্বনার শিকার হই। অপরদিকে যাদের মধ্যে এই প্রথার প্রতি শ্রদ্ধা নেই অর্থাৎ যারা আগামী কালের জন্যে বসে থাকবেন না কখনও, আজকের দিনটুকুকেও তার কাজে লাগাতে উদগ্রীব, তারাই তো সময়কে কাজে লাগাতে পারছেন পরিপূর্ণভাবে। জগতে বিস্ময়কর কিছু করার এখতিয়ার শুধুমাত্র তাদের জন্য, আগামী কল্যের গ্রুপের কারো জন্যে নয় অবশ্যই।

প্রতিদিন সকালে যখন আমরা ঘুম থেকে উঠি, তখন আমাদের পকেট বই ২৪ ঘন্টায় সমৃদ্ধ। রাসূলে করীম স. আমাদেরকে বলেছেন-

দুজন ফেরেশতার নিম্নরূপ আহবান ব্যতীত একটি প্রভাতও আসে না” হে আদম সন্তান! আমি একটি নতুন দিন এবং আমি তোমার কাজের সাক্ষী! সুতরাং আমার সর্বোত্তম ব্যবহার কর। শেষ বিচার দিনের আগে আমি আর কখনও ফিরে আসব না।”

একটি উদাত্ত আহ্বান রয়েছে এখানে, আমার সর্বোত্তম ব্যবহার কর, আর পাশাপাশি রয়েছে এক ধরনের সতর্কীকরণ। আজকের দিন সাক্ষ্য প্রদান করবে আমাদের ২৪ ঘন্টার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে শেষ বিচারের দিন। অর্থাৎ সময়ের ব্যবহারের ব্যাপারে সংযত হতে হবে আমাদেরকে- এটা একটা কঠিন সতর্কীকরণই বটে।

(খ) সময়ের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে সুযোগ

মানবকুলের হাতে সময়ের প্রধানত দু’ধরনের অর্থ রয়েছে। এগুলো হলো-

১) সময় হচ্ছে শুধুমাত্র সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা এবং বছরের মাপকাঠি। সময়ের কথা ভাবতে তারা ঘড়ি বা ক্যালেন্ডারের দিকে তাকান; এর একটি মাত্র রূপ আছে, তা হচ্ছে সময়ের ব্যপ্তি। এটি সময় সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অগভীর বা হাল্কা ধারনা, এরূপ ধারণা পোষণকারীদের কারো দ্বারাই শ্রেষ্ঠ কিছু সৃষ্টি হয়নি। এ ধারণা যেকোন উদ্যোগ গ্রহণকে ধ্বংস করে দেয়, সৃজনশীল অনুভূতিকে নিরুৎসাহিত করে এবং প্রাপ্ত সময় ব্যয়ের জন্য কোন কাজ দেয় না। কোন কাজ করার জন্যে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হলে এতে এক সপ্তাহ লাগবে, দশদিন সময় দিলে দশদিনই ব্যয় হবে।

২) সময় সম্পর্কে দ্বিতীয় ধারণা; সময় হচ্ছে সুযোগ। এই সুযোগ সকল সময়ের জন্য স্থায়ী থাকে না। যখন সে তার সর্বোচ্চ মানে অবস্থানে করে তখনই সে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব বহন করে থাকে। যারা সময়ের এই গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন তারা জীবনের সমস্যাবলীকে অনেকাংশে সহজীকরণ করে নেন, ফলশ্রুতিতে আগ্রহ ও আত্মত্যাগের এক মহান স্পৃহা দ্বারা তাদের কার্যসম্পাদন নিয়ন্ত্রিত হয়। আর এর ফলশ্রুতিতে সমূহ সম্ভাবনার দ্বার তাদের জন্যই উন্মোচিত হয়ে থাকে।

অবসর সময় না সৃজনশীল সময়?

তথাকথিত হারিয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপারে আপনি কি ভাবেন? হিসাব করে দেখেছেন কি আমরা দিনে কতবার ১৫ মিনিট বা ৩০ মিনিট বা ১ঘন্টা করে সময় নষ্ট করছি- গল্প করে বা ঘুমিয়ে বা ঘুম থেকে গ্রাত্রত্থান করে ঝিমিয়ে। এভাবে আমাদের হারিয়ে যাওয়া প্রতি দিনের ১৫ মিনিট মানে পছরের পূর্ণ ১১দিন আর প্রতিদিনের ৩০ মিনিট মানে বছরের পূর্ণ ২২ দিন। এভাবে ৩০মিনিট করে ব্যয়িত সময় এক মাসের মূল কর্মঘন্টার চেয়েও বেশি। এবারে চলুন এই হারিয়ে যাওয়া সময়কে কিভাবে সৃজনশীল সময়ে পরিবর্তন করবেন সে ব্যাপারে চিন্তা করি। আপনি কারো সাথে গল্প করছেন, সেক্ষেত্রে আপনার আলোচনা ফলদায়ক আলোচনায় পরিবর্তন করলেই তো হয়। ট্রেনে বা স্টীমারে ভ্রমনের ব্যয়িত সময়ে যদি চিন্তাশীল বা গঠনমূলক কল্পনার কাজে ব্যয়িত হয় তাহলেই তো তা সৃজনশীল সময়ে পরিবর্তিত হবে। আর ঘুম- এতটা দরকার আপনার? এটি বর্তমানে পরীক্ষিত সত্য যে একজন সুস্থ্য পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক মাত্র ৬ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। এর অধিক ঘুম বা অন্য দিকে ঘুমের ঘাটতি উভয়ই অসুস্থতার শিকার হচ্ছি।

Post a Comment

0 Comments